OllyoCon 2024
ছবিঃ সোহান জাকারিয়ার ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত
প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ওলিও কনফারেন্স। আমার চোখে OllyoCon 2024 এর অভিজ্ঞতা তুলে ধরব আপনাদের সামনে।
গত ৩১ আগস্ট ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল প্রথম ওলিওকন। সবার জন্য উন্মুক্ত এই কনফারেন্সে রেজিস্ট্রেশন শুরু করার ১৫ মিনিটের মধ্যে আমরা প্রায় হাজারের কাছাকাছি রেসপন্স পাই। তার মধ্যে বাছাই প্রক্রিয়া শেষে কনফার্মেশন ইমেইল পাঠানো হয়। কনফার্মেশন ইমেইলের মাধ্যমে OllyoCon 2024 এ প্রায় ৩ শতাধিক মানুষ আমাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। ডিজাইন টিম, প্রেজেন্টার টিম, ভলান্টিয়ার টিম এবং ম্যানেজমেন্ট টিম মিলে সবাই পরিশ্রম করে যান ইভেন্টটিকে সফল করার জন্য। ইভেন্টের সূচি ছিল এরকম।
09:00 AM - 11:00 AM Registration & Networking
11:00 AM - 11:30 AM Product Updates, Roadmap & Key Insights Keynote
11:30 AM - 12:15 PM Coffee Break
12:15 PM - 01:00 PM Redefining No-Code Website Building
01:00 PM - 02:30 PM Lunch
02:30 PM - 03:15 PM eLearning in 2024 and Beyond
03:15 PM - 04:00 PM Coffee Break
04:00 PM - 05:00 PM Product Experience & Networking
05:00 PM - 06:00 PM Snacks & Event Conclusion
ছবিঃ লক্ষণ গোপের ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত
ইভেন্টের আগের দুই দিন অফিসের কাজের পরে ইভেন্টের কিছু কাজ করি। বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যায়। ইভেন্টের দিন এক্সাইটমেন্টে সকালেই উঠে পড়ি এবং সাতটায় অফিসে চলে আসি। এসে ভেবেছিলাম আমি প্রথম চলে এসেছি। কিন্তু দেখি আমার টিম লিড তৌফিক ভাই আমার আগেই উপস্থিত। এমনকি আমাদের কয়েকজন গেস্টও ঢাকার বাইরে থেকে আসায় অনেক আগেই চলে এসেছেন অফিসে। ৮টার মধ্যে অফিসের শাটলে করে আমাদের অনেক সহকর্মী চলে আসেন। ইভেন্টের একটা ভাইব অনুভূত হতে থাকে।
ইভেন্টের দিন ৩০০ ফিট রাস্তার মস্তুল পয়েন্টে আমাদের শাটল মাইক্রোবাস রাখা হয়েছিল অতিথিদের নিয়ে আসার জন্য। ভোর থেকেই আমাদের সম্মানিত অতিথিরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ওলিও ক্যাম্পাসে আসতে থাকেন। রেজিস্ট্রেশন বুথে সবাইকে কনফার্মেশন QR Code দেখাতে হয় যা আমাদের ভলান্টিয়াররা স্ক্যান করে উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। এরপর সবাইকে ইভেন্টের গুডিস হিসেবে এটেন্ডি কার্ড, ব্যাগ, স্টিকার, নোটবুক, কলম এবং টি-শার্ট দেয়া হয়। সবাই ওলিও ক্যাম্পাস ঘুরে দেখেন। ছবি তোলা, নেটওয়ার্কিং ও আড্ডায় মেতে ওঠেন। ওলিওর সবগুলো পয়েন্টে আমরা ভলান্টিয়াররা ছিলাম এটেন্ডিদের সহযোগিতা করার জন্য। ওলিওতে কর্মরত সকলের জন্য ছিল ভলান্টিয়ার কার্ড এবং ওলিও পিপল লেখা সম্বলিত টি-শার্ট। ওলিওর সবাই একই গেটআপে OllyoCon 2024 এটেন্ড করেন যা আমাদের একটি টিম হিসেবে প্রেজেন্ট করে।
১১টা বাজতেই সবাই চলে যান ওলিওর চতুর্থ তলায় কনফারেন্স হলে। সেখানে সবাইকে Ollyocon 2024 এ স্বাগত জানান ওলিওর ফাউন্ডার ও সিইও কাওসার আহমেদ। উনি জুমশেপার থেকে আজকের ওলিওর জার্নি তুলে ধরেন। ওলিওর সাম্প্রতিক প্রোডাক্ট লাইনআপ Tutor LMS এবং নো কোড ওয়েবসাইট বিল্ডার Droip এর সম্ভাবনার উপর আলোকপাত করেন। ডেমো ভিডিওর মাধ্যমে উনি প্রোডাক্ট নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশবিশেষ তুলে ধরেন। সবশেষে জুলাই ২০২৪ এ ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে কাওসার আহমেদ ওনার উপস্থাপন শেষ করেন। ভলান্টিয়ার এবং বিশেষত ফুড বুথের দায়িত্বে থাকার কারণে কাওসার ভাইয়ের পুরো প্রেজেন্টেশন দেখার সুযোগ হয় নি। কিছুটা দেখেই আবার আমার দায়িত্বে থাকা ফুড কর্নারে চলে আসি।
সাড়ে ১১টায় সবার জন্য চা, কফি, কলা ও কাপ কেকের আয়োজন করা হয়। ওলিওর ৫টি স্পটে খাবারের বুথ বসানো হয়। অফিসের বাইরের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে ২টি, অফিসের ডাইনিং এরিয়াতে ২টি এবং দ্বিতীয় তলায় কফি কর্নারে ১টি। দ্বিতীয় তলায় ফুড বুথে আমি দায়িত্ব পালন করি। কনফারেন্স হল থেকে নিচে নামতেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়েন এই বুথে। বেশ ভীড় জমে যায়। আমিসহ অন্যান্য ভলান্টিয়াররা সবাইকে নিচের বুথগুলোর কথা জানান এবং সবাই বিভিন্ন বুথে চলে যান খাবার সংগ্রহের জন্য। আমি আমার বুথে খাবার পর্যাপ্ত আছে কি না তা তদারকি করতে থাকি এবং শেষ হয়ে গেলে আরো নিয়ে আসার জন্য লোক পাঠাই। এছাড়া অতিথিদের খাবারের জায়গা, ওয়াশরুম এবং খাবারের পর ময়লা ফেলার জায়গা দেখিয়ে দিচ্ছিলাম। সবাই আমাদের সহযোগিতাকে সাধুবাদ জানান।
সোয়া ১২টায় শুরু হয় দ্বিতীয় সেশন। এই সেশনে আমাদের নো কোড ওয়েবসাইট বিল্ডার Droip এর বিভিন্ন ফাংশনালিটি তুলে ধরা হয়। Figma to Droip ফিচারের মাধ্যমে এখন খুব সহজেই Figma ডিজাইন থেকে Droip এ ওয়েবসাইট ডেভেলপ করা সম্ভব এবং সেটা ফুল রেস্পন্সিভ ওয়েবসাইট। এছাড়া নেক্সট ভার্সনে আমাদের টিম Droip এর সাথে AI ইন্টিগ্রেট করবে যা কিনা ওয়েব ডেভেলপমেন্টকে একটি নতুন মাত্রা এনে দেবে।
ছবিঃ সাহাজুল ইসলামের ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত
ছবিঃ সাহাজুল ইসলামের ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত
দুপুর ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ছিল নামাজ এবং দুপুরের খাবারের বিরতি। ওলিওতে আগত অনেকেই নামাজ পড়তে চলে যান বেজমেন্টে অবস্থিত ওলিওর প্রেয়ার রুমে। ওলিওতে ছেলে, মেয়ে উভয়ের জন্য পৃথক প্রেয়ার রুম রয়েছে। দুপুরের খাবার হিসেবে ছিল চায়নিজ সেট মেনু ও কোল্ড ড্রিংকস। সবাই যাতে সুশৃঙ্খলভাবে লাঞ্চ সংগ্রহ করতে পারে আমি এটা খেয়াল রাখছিলাম। আমাদের ওয়ার্কস্টেশনের টেবিলগুলোতে বসেই সবাই খেয়ে নিচ্ছিলেন। আর লাঞ্চ এরিয়া ছিল কানায় কানায় ভরা। অল্প জায়গা হলেও আমরা ভলান্টিয়াররা চেষ্টা করেছি যাতে সবাই বসে খেতে পারেন। আমরা নিজেরাও ফাঁকে ফাঁকে খেয়ে নিচ্ছিলাম। ফুড কর্ণারে দায়িত্বরত আমি, সহকর্মী ইমরান, নুর ও সাইফুল ভাই আমরা সবার পরে খেতে বসি।
দুপুর আড়াইটায় সবাই আবার চলে যান কনফারেন্স হলে। ওলিওকনের শেষ সেশনে ২০২৪ এর ই-লার্নিং ট্রেন্ড এবং আমাদের প্রোডাক্ট Tutot LMS প্রেজেন্ট করা হয়। প্রেজেন্টার টিম ইন্ডিভিজুয়ালি Tutor LMS এর বিভিন্ন ফিচার এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন। Tutor LMS এর AI ইন্টিগ্রেশনের মাধ্যমে কোর্স বিল্ড করা কতটা সহজ হবে তাও তুলে ধরা হয় প্রেজেন্টেশনে। এই সময়টায় একটু ফ্রি টাইম পেয়ে আমরা অফিস প্রাঙ্গণে অবস্থান করি। তখন আমার স্কুলফ্রেন্ড রুবাইয়াত আসে কনফারেন্স এটেন্ড করার জন্য। রুবাইয়াত ফারহান বর্তমানে মার্কোপোলোর কো-ফাউন্ডার হিসেবে কাজ করছে। প্রায় ১৩ বছর পর ফিজিক্যালি ওর সাথে দেখা হয়ে বেশ ভালো লাগল। এছাড়াও কনফারেন্সে আসিভ ভাই, নিলয় ভাই, ভার্সিটির জুনিয়র সীমান্ত, আসিফসহ ফেসবুকে কানেক্টেড অনেকের সাথেই সামনাসামনি সাক্ষাত ও আলাপচারিতার সুযোগ হয়।
সোয়া ৩টায় আবার চা, কফি এবং কুকিজ ব্রেক। খাওয়ার পাশাপাশি ওলিওর ইনডোর গেমস রুমে দেখা যায় ফুসবল, এয়ার হকি ও টেবিল টেনিস খেলোয়াড়দের ভীড়। ছোটবেলার কয়েন দিয়ে ভিডিও গেমস খেলার বক্সে সবাই মেতে ওঠেন ভিনটেজ গেমগুলোতে। ওলিওর আউটডোর স্পোর্টস জোনে বাস্কেটবল নিয়েও খেলতে নেমে যান অনেকেই। সেশনের ফাঁকে ফাঁকে চা/কফির সাথে আড্ডাটা বেশ উপভোগ করেন সবাই। ইভেন্টের দিন পুরো ওলিও অফিস অতিথিদের জন্য উন্মুক্ত ছিল।
বিকাল ৪টায় কনফারেন্স হলের প্রবেশপথের পাশেই ওলিওর দুইটি অস্থায়ী বুথে Droip এবং Tutor LMS প্রোডাক্ট শোকেস করা হয়। এখানে আমন্ত্রিত অতিথিরা আমাদের প্রোডাক্ট এক্সপেরিয়েন্স করেন। আমাদের প্রোডাক্ট ডেভেলপার টিম তাদেরকে প্রোডাক্ট দেখতে সহযোগিতা করেন এবং প্রোডাক্ট নিয়ে সকল কৌতূহল মেটাতে চেষ্টা করেন। বেশ আগ্রহ নিয়ে ওনারা প্রোডাক্টের খুঁটিনাটি ফিচার জানতে চাচ্ছিলেন এবং নিজেরা ট্রাই করে দেখছিলেন।
বিকাল ৫টায় সবাইকে পিজ্জা সার্ভ করা হয়। এর মধ্য দিয়েই OllyoCon 2024 সমাপ্ত হয়। সবার জন্য ৩০০ ফিটের মস্তুল পর্যন্ত ওলিওর পক্ষ থেকে শাটল মাইক্রোবাসের ব্যবস্থা ছিল। একে একে সবাই বিদায় নিলে ওলিওতে সন্ধ্যা নেমে আসে এবং একটি উৎসবমুখর দিনের সমাপ্তি ঘটে। তবে আমাদের জন্য আরেকটি আনন্দের উপলক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায় সন্ধ্যার পরের গানের আয়োজন। কনফারেন্স হলে গায়কের গানের পাশাপশি আমরা নিজেরা নেচে-গেয়ে সন্ধ্যাটা আরো আনন্দমুখর করে তুলি। এই অনুষ্ঠানটি ছিল ওলিওর কর্মীদের জন্য সারাদিন ধকলের পর একটু রিফ্রেশমেন্ট। আমাদের সহকর্মীদের মধ্যে ফারিনা গান করেন। ফারিনার গান আমরা বেশ উপভোগ করি। সাথে ছিল আমাদের শাওন ভাইয়ের আবৃত্তি। সব মিলিয়ে বেশ ব্যস্ত একটা দিন শেষ করে রাতে বাসায় ফিরে আসি। ওলিওকন ২০২৪ ওলিওর ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
ছবিঃ সাইফুল ইসলামের ফেসবুক ওয়াল থেকে সংগৃহীত
I can do things you cannot, you can do things I cannot; together we can do great things.
- Mother Teresa