বিড়াল থেকে কি মানুষে রোগ ছড়ায়?
অনেকেই আমার কাছে জানতে চেয়েছেন বিড়াল থেকে মানুষের অসুখ হয় কি না। তাই ভাবলাম এই বিষয়ে আমার আহরিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা লিখি।
২০১৫ সালের আগস্ট মাস থেকে আমি বিড়াল পালি। পোষা প্রাণীদের মধ্যে বিড়াল আমার অনেক আগে থেকেই পছন্দ ছিলো। আজ ২০২৪ সালে এসে আমার বাসায় ৮টা বিড়াল। আমার রিসার্চ এবং অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বিড়াল থেকে মানুষের মধ্যে রোগ ছড়ানোর সম্ভাবনা খুবই কম।
ছবিঃ ২০১৫ সালে আমাদের দেশী ব্রিডের বিড়াল মীনা
আমি আগে আমাদের কলোনীর বাসায় দেশী বিড়াল পালতাম। ওর প্রায় সব মিলিয়ে ২০টির মতো বাচ্চা হয়েছে আমাদের বাসায়। ও বেশিরভাগ সময় বাইরে ঘোরাঘুরি করত। আর বাসায় এসে খাবার খেত, ঘুমাত। ওকে কখনো কোলে নিতে পারতাম না। ওর কোলে ওঠা খুবই অপছন্দ ছিল। তবে আমার বর্তমান বিড়াল মীনাকে সবসময় কোলে নেয়া যায়। ও কোলে উঠতে বেশ পছন্দ করে। যাই হোক আমাদের আগের মীনার আমার দেখা মতে দুজন সঙ্গী ছিল। ওর সঙ্গীরা মাঝে মাঝে আমাদের বাসার দরজায় এসে ওকে ডাকত। ডাক শুনলেই আমাদের মীনা বাইরে বের হওয়ার জন্য পাগল হয়ে যেত। বাসার মূল দরজার কাছে এসে ডাকত দরজা খুলে দেয়ার জন্য। ওকে আমরা কখনো জোর করে আটকে রাখিনি। ওকে আমরা কখনো ভেট বা পশু ডাক্তার দেখাইনি। আমাদের অনেক আঁচড়, কামড় দিয়েছে। আল্লাহর রহমতে ওর থেকে আমাদের পরিবারের কারোর কোনো রোগবালাই হয়নি।
তাহলে কি বিড়াল থেকে মানুষে রোগ ছড়ায় না?
উত্তর হচ্ছে ছড়ায়। তবে এক্ষেত্রে কিছু শর্ত আছে। প্রথম শর্ত হলো বিড়াল যদি অসুস্থ হয় তবেই তার থেকে রোগ ছড়ানোর একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়। বিড়াল র্যাবিস বা জলাতঙ্ক রোগের বাহক হতে পারে। এজন্য বিড়ালকে ২ মাস বয়স হয়ে গেলে র্যাবিসের টিকা দিতে হয়। বর্তমানে আমার বাসার বিড়ালগুলো মিক্স ব্রিডের। ওদের সবাইকে আমি সময় হওয়া মাত্রই র্যাবিসের টিকা দিয়ে দিয়েছি। তাই ওদের নিজেদের র্যাবিসে আক্রান্ত হবার বা মানুষকে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা নেই।
এছাড়া ফাঙ্গাস বা পরজীবী সংক্রমণ করতে পারে বিড়াল। এজন্য অবশ্যই বিড়ালকে আগে পরজীবীর বাহক হতে হবে। আমি আমার বিড়ালগুলোর সামান্যতম পরিবর্তনেও ভেট বা পশু ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই এবং সমাধান করে ফেলি। বছরে একবার বিড়ালকে ফ্লু থেকে বাঁচাতে টিকা দিতে হয়। আমার সবগুলো বিড়ালকে আমি বছরে একবার ভেট ক্লিনিকে নিয়ে টিকা দিই।
বিড়াল থেকে এলার্জি ট্রিগার হতে পারে যদিও এটি খুব বিরল। বিড়ালের পশম যদি নাকে যায় সেক্ষেত্রে এলার্জিক ব্যক্তির হাঁচি, কাশির উদ্রেক হতে পারে। তবে মানুষের যদি বিড়ালের পশমে বা ধুলাবালিতে এলার্জি না থাকে তাহলে সে সম্ভাবনা নেই। দীর্ঘদিন থেকে বিড়াল পালন করি তাই বলতে পারি আমারও বিড়াল থেকে এলার্জির সমস্যা নেই।
বিড়ালের পিছনে খাটতে খাটতে পরিশ্রমে কি অসুস্থ হয়ে যাওয়া সম্ভব?
আমার আগের বাসার বিড়াল মূলত আম্মু দেখাশোনা করত। খাবার দেয়া ছাড়া ওর পিছনে তেমন কষ্ট ছিলো না। এমনকি বাচ্চা হওয়ার প্রসেসটাও মা বিড়াল নিজেই করত। আর ও বাসার বাইরেই থাকত বেশিরভাগ সময়। পি/পটি বাইরে গিয়ে করে আসত। এখন বিড়াল দেখাশোনা করে আমার স্ত্রী। বিড়ালের একটি ভালো দিক হলো ওদের ট্রেইন করানো যায়। আমার বিড়ালগুলা নির্ধারিত লিটার বক্সে পি/পটি করে। লিটার বক্সে পি/পটি করার কারণে বাসায় কোনো গন্ধ হয় না। আমার বাসায় কেউ প্রথম এলে ধরতেই পারবেন না যে বাসায় বিড়াল আছে। নির্দিষ্ট জায়গায় খাবার দেয়া থাকে। ওরা নিজেরা ক্ষুধা লাগলে খেয়ে নেয়। এছাড়া ওদের সাথে খেলতে হয়, ওদেরকে সময় দিতে হয়। এই কাজ করতে গেলে আসলে নিজেরও ভালো লাগে। সারাদিনের কাজের পর ওদেরকে সময় দিলে নিজেরই রিফ্রেশিং লাগে।
সবশেষে এটাই বলতে চাই বিড়াল থেকে মানুষের রোগবালাই হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বিড়াল স্বভাবগত কারণেই নিজেকে পরিষ্কার রাখতে পছন্দ করে। কিছু সময় পর পরই বিড়াল নিজেকে চেটে পরিষ্কার করতে থাকে। খাবার খাওয়ার পরও ওরা এটা করে। আরেকটি বিষয় অনেকেই জানেন না বিড়ালকে নিয়মিত গোসল করানোর দরকার নেই। শুধুমাত্র ময়লা হলেই তাদের গোসল করানো যেতে পারে। এটা আপনি মাসে একবার করাতে পারেন। নিয়মিত গোসল করাতে গেলে বিড়ালের ঠাণ্ডা লেগে যেতে পারে বা কানে পানি ঢুকে ইনফেকশন হতে পারে। তাই এই ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার।
ছবিঃ ২০২৪ সালে আমাদের মিক্স ব্রিডের বিড়াল মীনা
A cat has absolute emotional honesty: human beings, for one reason or another, may hide their feelings, but a cat does not.
– Ernest Hemingway