বিল্লু বাহিনী পরিচিতিঃ কেটি

বিল্লু বাহিনী পরিচিতিঃ কেটি

বিল্লু বাহিনীর প্রথম সদস্যের সাথে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেব। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জন্ম এই ছেলে বিড়ালের। ওকে আমরা নাম দিয়েছি কেটি।

বিল্লু বাহিনীর লিডার এবং আমাদের পরিবারের প্রথম বিড়াল কেটি। আমার শাশুড়ীর দেয়া এই নামেই ওকে আমরা ডাকি। তবে দুঃখের বিষয় কেটি আমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। কেটি জন্ম থেকেই কানে শোনে না। ও আমাদের সাথে যুক্ত হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে। প্রথমে ওর কানে না শোনার বিষয়টি আমরা না জানলেও ধীরে ধীরে আশংকা করতে থাকি। একেবারে নিশ্চিত হই জানুয়ারীর ১ তারিখ যখন সারা ঢাকা শহরে পটকার আওয়াজ অথচ কেটির ভাবান্তর নেই। সেদিন ও আমাদের সাথে জানালার কার্নিশে বসে আতশবাজি উপভোগ করে। সাধারণত বিড়াল এই পটকার আওয়াজ শুনলে খাট বা টেবিলের নিচে বা ঘরের কোণায় গিয়ে লুকিয়ে থাকে। ওরা বিকট শব্দ অনেক ভয় পায়। কানে না শোনার কারণে কেটি কখনো একা থাকে না। একা হলেই ও ডাকতে থাকে। ও অনেক জোরে এবং বিভিন্ন স্বরে ডাকতে পারে। হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে গোসলের পরে ওকে শুকাতে গেলে বা প্রেশার কুকারের শব্দে ও পালায় না। তাই ওকে বেশ সাহসী মনে হয়। কানে না শোনার আরেকটা ভালো দিক হল ওর ভালো ঘুম হয় যেহেতু শব্দে ওর ঘুম ভাঙে না।

Image
Image
Image

যাই হোক কেটিকে দিয়েই আমাদের বিড়াল পালার শুরু। তাই বিড়াল নিয়ে সকল অভিজ্ঞতার প্রথমেই আসে কেটির নাম। কেটি পারসিয়ান মিক্স ব্রিডের বিড়াল। ওকে প্রথমে ওর নীল চোখ দেখে পছন্দ করি। বিকালে ওকে নেয়ার কথা কনফার্ম করে বিড়ালের খাবার এবং এক্সেসরিজের একটি দোকান ডিসেন্ট পেট শপে যাই। সেখান থেকে ওর জন্য ক্যাট ফুড, লিটার, খেলনা ও ওকে আনার জন্য ক্যারিং ব্যাকপ্যাক কিনি। সন্ধ্যাবেলা আমি আর আমার স্ত্রী ওকে আনতে বাইকে করে কাকরাইল থেকে সাভার যাই। ওকে আমরা ৮০০০ টাকা দিয়ে কিনে আনি। বাসায় আনার পুরো রাস্তা ও ম্যাও ম্যাও করে ডাকছিল। বাসায় এসেও নতুন পরিবেশে এডজাস্ট হতে ২/৩ দিন সময় লাগে ওর। আগের বাসায় ওর বাবা, মা, ভাই, বোন রেখে এই বাসায় এসে একা ও মানিয়ে নেয়। ও যাতে জানালা বা বারান্দা দিয়ে দুষ্টুমী করতে গিয়ে দূর্ঘটনা না ঘটিয়ে ফেলে তাই বাসা ক্যাটপ্রুফ করে নিই। প্লাস্টিকের নেট দিয়ে বারান্দার গ্রিল এবং জানালা বন্ধ করি।

Image
Image
Image

ব্রয়লার চিকেন সিদ্ধের সাথে একটু গাজর বা আলু সিদ্ধ ছিল ওর প্রথম খাবার। এর পাশাপাশি ক্যাট ফুড খায় সে। ওর খাবার নিয়ে ভালো এক্সপেরিমেন্ট করেছি আমরা। মাছও কিছুদিন ট্রাই করেছিলাম কিন্তু পটি পাতলা হত আর ও মাছ খুব পছন্দ করেনি। বর্তমানে ক্যাট ফুড ওর পছন্দের তালিকার শীর্ষে। এছাড়া শুটকী ওর খুব পছন্দ। আমি শুটকী না খেলেও ওদের জন্য কিনেছিলাম। ও তখন পাগলের মতো শুটকী খেয়েছে। কেটি রান্না করা খাবারে কখনো মুখ দেয় না। যদিও একবার কাঁচা ডিমের পোটলা চুরি করতে গিয়ে ডিম ভেঙেছিল কয়েকটা।

বিড়ালের নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে ফ্লু ভ্যাক্সিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিড়ালের ৪ মাস বয়স থেকে এই ভ্যাক্সিন দিতে হয়। প্রতি বছরে একবার ওদের এই ডোজ দিতে হয়। এটি মূলত বিড়ালকে সাধারণ ফ্লু থেকে রক্ষা করে এবং মানুষকে আচড় দিলে মানুষকেও নিরাপদে রাখে। কেটিকে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে এই ভ্যাক্সিনটি দিই। একবার ওর লেজে স্কিন প্রব্লেম হয়। ওকে বিডি পেট কেয়ারে নিয়ে যাই। বসুন্ধরায় অবস্থিত এই ক্লিনিকেই মূলত আমরা বিড়ালের ভ্যাক্সিন দেয়া এবং ডাক্তার দেখিয়ে থাকি। ডাক্তারের পরামর্শে ওর লেজ ট্রিম করে প্রেসক্রাইব করা শ্যাম্পু দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করি। ধীরে ধীরে এটা ঠিক হয়ে যায়। 

Image
Image

কেটি লিটারে পটি করত প্রথমে। পরবর্তীতে সে বড় হওয়ার সাথে সাথে লিটারে পটি করা বাদ দিয়ে দিল। যেখানে সেখানে পি, পটি করতে লাগল। আমি তখন একটা বুদ্ধি বের করি। বাসায় কয়েকটা বেলচা নিয়ে আসি এবং ওকে বেলচায় ট্রেইন করাই। বাইরে করলে টিস্যু, ভিনেগার দিয়ে মুছতে হত। বেলচায় করলে বেলচাটা ধুয়ে ফেললেই চলে। যদিও পরবর্তীতে ও যখন হিটে আসে তখন পি স্প্রে করা শুরু করে। ওর জ্বালায় বাসার সব আসবাবপত্র, বিছানা ঠিক রাখা মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। এর পরেই মূলত কেটির জন্য মেয়ে বিড়াল নিয়ে আসি। এভাবে ২টি মেয়ে বিড়াল আনার পরেও ওর স্প্রে করার অভ্যাস ঠিক হচ্ছিল না। তারপর ওকে নিউটার করে দিতে বাধ্য হই ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে। নিউটার করানোর সময় ওকে অজ্ঞান করতে হয়। তাই একটু ভয় পেয়েছিলাম। তবে ওর জ্ঞান দ্রুতই ফিরে আসে এবং কোন জটিলতা ছাড়াই এই প্রসেস সম্পন্ন হয়।

Image
Image
Image
Image

কেটি খুবই মিশুক এবং খেলাপ্রিয়। ও বেশিরভাগ সময়ই আমাদের সাথে ঘেঁষে থাকে। আমার সাথে ঘুমাতে ও খুবই পছন্দ করে। আমার গন্ধ কেন জানিনা সব বিড়ালই পছন্দ করে। কেটি জুতাও বেশ পছন্দ করে। আমি বা কেউ বাইরে থেকে এলেই জুতার উপর বসে থাকে। কেটির সবচেয়ে প্রিয় খেলা লুকোচুরি। ওকে ছুঁয়ে দৌড় দিলে ও পিছে পিছে দৌড় দিয়ে আমাদের খুঁজে বের করত। কেটি পানি খুব পছন্দ করে। কল ছেড়ে রাখলে ও পানি ধরার চেষ্টা করে। এর ফলে ওর মাথাও পানিতে ভিজে যায়। কেটি নখ কাটার সময় কোন দুষ্টুমী করে না। খুব সহজেই ওর নখ কেটে ফেলা যায়। প্রায় সময়ই আমি একা ওকে কোলে নিয়ে ওর হাত পায়ের নখ কেটে দিই। ও ডিভাইসে ভিডিও দেখতে পছন্দ করে। আমরা মোবাইলে ভিডিও ছাড়লে আমাদের সাথে বসে বসে দেখে। আমাদের বাসায় অনেক গাছ আছে। কেটি কখনো গাছ নষ্ট করে নি যেটা অন্য বিড়াল করে। কেটি পাখির পালক পেলে উন্মাদ হয়ে যায়। কেটির আরেকটা গুণ হল ও কখনো আমাদের আক্রমণ করে না। গোসল করানো, কৃমির ওষুধ খাওয়ানো বা পি করার জন্য ওকে মারলেও ও আমাদের বাধা দেয় না। ও সবসময় একটা নিষ্পাপ লুক নিয়ে থাকে। এছাড়া কেটি অনেক পরিষ্কার থাকতে পছন্দ করে। সবসময় নিজেকে চেটে পরিষ্কার করতে থাকে।

Image
Image
Image

কেটিকে মূলত ওর সাদা রঙ এবং নীল চোখের জন্য আমাদের খুবই পছন্দ। কেটি আমাদের অনেক জ্বালায় তবু ওর প্রতি আমার মায়া একটু বেশি। কেটির নিষ্পাপ চাহনীর জন্য ওকে চাইলেও শাসন করতে পারি না।  অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে বসে থাকে। বাচ্চা অবস্থায় কেটি সারাক্ষণ আমার সাথেই থাকত। কেটি সবসময় সুস্থ থাকুক এটাই প্রত্যাশা করি।

Image

Just watching my cats can make me happy.

- Paula Cole

Related Articles

Image