আমার টাইপিং এর ইতিহাস
শিক্ষাজীবন থেকে পেশাগত জীবনে অনেককেই দেখি এক হাত বা আরো নির্দিষ্ট করে বললে এক তর্জনী দিয়ে কীবোর্ডে টাইপ করে থাকেন। আজ আমার টাইপিং এর ইতিহাস আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
আমার টাইপিং এর হাতেখড়ি হয় এসএসসি পরীক্ষার পরে। পরীক্ষার পরবর্তী তিন মাসের অবসরে ঢাকার আরামবাগে একটি কম্পিউটার কোর্সে ভর্তি হই। "কেয়ার কম্পিউটার" নামক সেই প্রতিষ্ঠান থেকে বেসিক কম্পিউটার এবং টাইপিং প্রশিক্ষণ নিই। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা বিজয় টাইপিং ও শিখেছিলাম। যদিও বর্তমানে চর্চার অভাবে বিজয় টাইপিং একেবারে ভুলে গেছি। তখন থেকেই আমি বাসায় টাইপিং অনুশীলন করি। কীবোর্ড না দেখে এমনকি চোখ বন্ধ করেও নির্ভুল টাইপিং করতে পারি সেই সময় থেকেই। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে Typeracer এ টাইপ করতাম। বন্ধুদের সাথে টাইপিং স্পিডের প্রতিযোগিতা করতাম। বন্ধু আকাশের সাথে বেশ ভালো অনুশীলন হত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে। বর্তমানে অনুশীলন করি Typing এ। এটার সবগুলো লেসন শেষ করার ইচ্ছা আছে।
Christopher Sholes ১৮৭০ সালে কীবোর্ডের সবচেয়ে জনপ্রিয় QWERTY লেআউট আবিষ্কার করেন। এই লেআউটে A-Z সিরিয়ালি না দিয়ে মানুষের জন্য টাইপিং এ সুবিধাজনক একটি লেআউট করা হয়েছে। এখানে বেশি ব্যবহৃত অক্ষরগুলো সুবিধাজনক পজিশনে রাখা হয়েছে। এই লেআউট ছাড়াও QWERTZ, AZERTY লেআউট কীবোর্ড আছে। তবে এই কীবোর্ডগুলো সাধারণত পাওয়া যায় না। আমি সবসময় QWERTY লেআউটের কীবোর্ড ব্যবহার করে এসেছি। এই লেআউটে F এবং J এই দুটো কীতে খেয়াল করবেন একটু উঁচু অংশ আছে যা আপনার আঙ্গুলে লাগবে। এটি টাইপিং এ সুবিধার জন্য দেয়া। আপনি না দেখেও কীবোর্ডের এই দুটো কীতে আপনার দুটো তর্জনী বসিয়ে টাইপ শুরু করে দিতে পারবেন। আবার টাইপ করতে করতে আঙুল সরে গেলেও এই দুটো কীতে তর্জনী ফিরিয়ে এনে টাইপিং করতে পারবেন। এভাবে মধ্যমার জন্য D এবং K, অনামিকার জন্য S এবং L, কনিষ্ঠার জন্য A এবং : কীগুলো পাশাপাশি বসানো আছে এই লেআউটে। আঙ্গুল প্লেস করার পর দেখবেন আপনার বাম হাতের আঙ্গুল যথাক্রমে ASDF এবং ডান হাতের আঙ্গুল যথাক্রমে JKL: এর উপর বসবে। আর বৃদ্ধাঙ্গুলিদ্বয় ব্যবহৃত হবে স্পেসবার প্রেস করার জন্য। আঙ্গুল বসানোর পর উপরে, নীচে এবং তর্জনীর পাশে সরিয়ে কীবোর্ডের সবগুলো কী প্রেস করতে পারবেন।
বাম হাতের | ডান হাতের |
তর্জনী FGRTVB | তর্জনী HJYUNM |
মধ্যমা DEC | মধ্যমা KI,< |
অনামিকা SWX | অনামিকা LO.> |
কনিষ্ঠা AQZ | কনিষ্ঠা ;:'"P/? |
টাইপিং এর শুরুতে ডেস্কটপে A4Tech কীবোর্ড ব্যবহার করতাম। পরবর্তীতে Logitech, Macbook কীবোর্ড ব্যবহার করেছি। এছাড়া মোবাইলে ব্যবহার করেছি Microsoft Swiftkey, GBoard, iPhone Default কীবোর্ড। অনলাইনে বাংলা লেখার জন্য অভ্র কীবোর্ড ব্যবহার করি সব প্ল্যাটফর্মেই। টাইপিং শেখার ফলে আমি অনলাইনে লেখার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে গেছি। কীবোর্ড মুখস্থ থাকার ফলে কোন জায়গায় কোন অক্ষর আছে সেটা আমি সহজেই বের করতে পারি। মোবাইলে এমনকি আ্যপল ওয়াচ কীবোর্ডে লেখার ক্ষেত্রেও এটা আমাকে সহযোগিতা করে। মোবাইলের কীবোর্ডে দু হাত বসিয়ে লেখা না গেলেও আমি সোয়াইপ করে লিখি। সেটাও সম্ভব হয়েছে কীবোর্ড লেআউট জানা থাকার ফলে।
আসলেই কী টাইপিং শেখা জরুরী? আমি মনে করি টাইপিং বর্তমানে একটি আবশ্যক দক্ষতার পরিমাপক। পেশাগত কাজে যদি আপনাকে কম্পিউটারে টাইপ করতে নাও হয় স্মার্টফোনে আপনাকে নিশ্চয়ই টাইপ করতে হয়। অন্তত সেজন্য হলেও আপনার টাইপিং জানা উচিত। চোখ বন্ধ করে টাইপ করা বা অতি দ্রুত টাইপ করার প্রয়োজন নেই। তবে একটি ন্যুনতম স্পিড অর্জন করতে পারলে দেখবেন দৈনন্দিন জীবনে অনেক এগিয়ে যাবেন। টাইপিং স্পিড পরিমাপ করা হয় WPM বা Word Per Minute দিয়ে। আপনি ১ মিনিটে যতগুলো শব্দ টাইপ করতে পারবেন তাই হবে আপনার WPM। যেমন কারোর টাইপিং স্পিড 45WPM হলে বুঝে নিবেন উনি মিনিটে ৪৫টি শব্দ টাইপ করতে পারেন। আরেকটি পরিমাপক হল Accuracy। আপনি যখন টাইপিং অনুশীলন করবেন accuracy বেশি রাখার চেষ্টা করবেন। টাইপ করতে গিয়ে ভুল হলে ব্যাকস্পেস দিয়ে কেটে সেটা ঠিক করে ফেলবেন। এড়িয়ে পরের শব্দে চলে যাবেন না। এতে accuracy ভালো থাকবে।
টাইপিং কোথায় শিখবেন? অনলাইনে খুঁজলে আপনি অনেক সাইট পাবেন। কিছু সাইটের নাম আমি দিয়ে দিচ্ছি।
টাইপিং শেখার জন্য আমি রিকমেন্ড করি Typing। এখানে বিগিনার থেকে এডভান্স লেভেলে আপনি টাইপিং শিখতে পারবেন। অক্ষর থেকে শুরু করে শব্দ এবং বাক্য টাইপিং এর মাধ্যমে টাইপিং দক্ষতা অর্জন করবেন। ওরা লেসন শেষ হলে আপনাকে সার্টিফিকেট ও দেবে। শেখা শেষ হলে অনুশীলনের জন্য Typeracer ব্যবহার করতে পারেন। এখানে আপনি আপনার বন্ধু অথবা অপরিচিতদের সাথে টাইপিং রেস খেলতে পারবেন। একটা প্যারাগ্রাফ দেয়া হবে এবং একই সময়ে সবাই সেটি টাইপ করতে শুরু করবেন। যিনি সবার আগে এবং যত সম্ভব নির্ভুল টাইপ করতে পারবেন তিনি বিজয়ী হবেন। এভাবে নিয়মিত অনুশীলনে দেখবেন আপনি টাইপিং করে মজা পাচ্ছেন এবং টাইপিং এ দক্ষ হয়ে উঠছেন। তাহলে আর দেরী কেন? আজই টাইপিং শেখা শুরু করুন।
When love and skill work together, expect a masterpiece.
- John Ruskin